Header Ads

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এবং মেহিকোর সঙ্গে তার সংযোগ (১ম পর্ব)

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এবং মেহিকোর সঙ্গে তার সংযোগ (১ম পর্ব)


গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের জন্ম কলোম্বিয়ায় হলেও কার্যত মেহিকোই হয়ে উঠেছিল তার জন্মভূমির মতো। সিআইএর তাড়া খেয়ে সেই যে ১৯৬১ সনের ২ জুলাই মাসে এই দেশটিতে আশ্রয় নিয়ে তারপর থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়ায় তিনি নিয়মিত যাতায়াত করলেও তার কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল মেহিকোই। পরে অবশ্য তিনি একেবারে স্থায়ীভাবেই আমৃত্যু মেহিকোতে থেকে যান। মেহিকোর সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে Televisa.news পত্রিকায় ৬ মার্চ ২০১৭ সালে Gabriel García Márquez y su relación con México শিরোনামে যে-নিবন্ধটি প্রকাশিত এটি তারই অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন প্রাবন্ধিক অনুবাদক অরুদ্ধতী ভট্টাচার্য।

১৯৮২ সালের নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত অমর কথাসাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের নব্বইতম জন্মদিন। এই উপলক্ষ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যাবলীর মাধ্যমে তাঁর ঐতিহ্যকে স্মরণের আয়োজন।
কলোম্বিয়ার এই মহৎ সাহিত্যিকের জীবন ও কর্মের সঙ্গে পৃথিবীর যে কয়েকটি দেশ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত তাদের মধ্যে অন্যতম হলো মেহিকো। জীবনের বেশ কয়েক দশক এই দেশে কাটিয়েছেন বন্ধুদের অতি আদরের গাবো

একশো বছরের নিঃসঙ্গতার প্রেরণা
মেহিকো আর গার্সিয়া মার্কেসের সাহিত্য প্রতিভা এ দুয়ের মধ্যেকার ইতিহাসের শুরু ১৯৬১ সালে। সেই সময় কুবার প্রেন্সা লাতিনা১ সংবাদসংস্থার প্রতিনিধি হয়ে নিউ ইয়র্কে থাকার সময় গার্সিয়া মার্কেস যে সাংবাদিক প্রবন্ধ লিখতেন তার ফলস্বরূপ হয় সিআইএনয়তো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত কুবার মানুষ (বিপ্লববিরোধী) প্রতিনিয়ত তাঁকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে।

তখন স্ত্রী মেরসেদেস আর ছেলে রোদ্রিগোকে নিয়ে গার্সিয়া মার্কেস মেহিকো শহরে চলে আসেন। কাজ শুরু করেন সুসেসোসলা ফামিলিয়ানামের দুটি পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে। কিন্তু এই কাজে বিশেষ সাফল্য না পাওয়ায় ওয়াল্টার টমসনবিজ্ঞাপন সংস্থায় কপি লেখার কাজ নেন এবং পাশাপাশি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করেন।
এর আগেই তিনি কয়েকটি উপন্যাস ও গল্প লিখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু কলোম্বিয়ার বাইরে তখনও তাঁকে বিশেষ কেউ চিনত না। তাছাড়াও সেই সময় বেশ কিছুদিন যাবৎ তিনি কিছু লিখতে পারছিলেন না।
১৯৬৫ সালের শুরুতে তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত বাঁক নেয়। এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে স্ত্রী-পুত্রসহ বেড়াতে যাচ্ছিলেন আকাপুলকোয়। পথে, গাড়ি চালাতে চালাতে, তাঁর মাথায় আবির্ভূত হয় একটি বাক্য:
বহু বছর পরে, ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে, কর্নেল আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার মনে পড়ল দূরবর্তী সেই বিকেলের কথা যখন তাঁর বাবা তাঁকে বরফ আবিষ্কার করতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অবশ্য অনেক বছর ধরেই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বুয়েন্দিয়া পরিবার নিয়ে একটা উপন্যাসের ধারণা। এমনকি তাঁর পূর্ববর্তী লেখায় মাকোন্দোইতিমধ্যেই উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু উপরে উল্লিখিত ওই বাক্যটাই ছিল তাঁর মস্তিষ্কে নিহিত উপন্যাসের বহিঃপ্রকাশের প্রথম উৎসরণ।
মাথার ভেতরে লেখাটা এতটাই প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল যে ওখানেই, কুয়ের্নাবাকার পথেই, শব্দের পর শব্দ ধরে, প্রথম অধ্যায়ের পুরোটা একজন টাইপিস্টকে মুখে মুখে বলে দিতে পারতাম”, সেই যাত্রার কথা স্মরণ করে তিনি বলেছিলেন।
বাকি পথটায় তিনি গল্পটাকে মনে মনে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তারপর এতটাই মগ্ন হয়ে পড়লেন যে তৃতীয় দিনে ফিরে এলেন আকাপুলকো থেকে।2 পৌঁছলেন সান আনহেল ইনের ১৯ নম্বর লা লোমার বাসায় আর ছেড়ে দিলেন সব কাজ, ঘরে ঢুকে গেলেন লিখতে এবং পরের মাসগুলোয় লেখা ছাড়া আর কিছু তিনি করেননি। প্রতিদিন ছঘন্টা বা তার একটু বেশি ধরে সময় লিখতেন। বাড়ির বাইরে যেতেন খুবই কম।
এদিকে টাকা ফুরিয়ে আসতে লাগল। মেরসেদেস তখন ধার করতে শুরু করলেন। বাড়িওলাকে বলতেন পরে টাকা দেবেন, এলাকার দোকানদারদের থেকেও জিনিষ নিতেন ধারে এবং একে একে তাঁর যা কিছু ছিল বন্ধক দিয়ে দিলেন। গাড়িটাও একসময় বিক্রি করে দিতে হলো। সেই দুরূহ সময়টা যে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন তা শুধু বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশি, এমনকি কিছু অপরিচিত মানুষেরও উদার বদান্যতার সৌজন্যে।
আঠারো মাস পরে শেষ হলো গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাস। বুয়েনোস আইরেসে সুদামেরিকা প্রকাশনায় ডাকযোগে পাঠানো হলো পান্ডুলিপির অর্ধেক (কেননা পুরো পান্ডুলিপি একসঙ্গে পাঠানোর মতো টাকা ছিল না) এবং প্রকাশক ছাপতে রাজি হলেন।
একশো বছরের নিঃসঙ্গতা প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালের মার্চ মাস।৩ এবং অনতিবিলম্বেই অধিকার করে নেয় বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি্র আসন।

বন্ধুরা
মেহিকো বাসের শুরু থেকেই ওখানকার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব তৈরি হয়। একেবারে প্রথমে তিনি শুধু চিনতেন আরেক কলোম্বিয়ার মানুষ আলবারো মুতিসকে। মুতিস তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন হোসে এমিলিও পাচেকো আর কার্লোস ফুয়েন্তেসের, এই শেষোক্ত মানুষটির সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে জমে উঠল নিবিড় সখ্য।

অন্যান্য বন্ধুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কার্লোস মোনসিবাইস, আউগুস্তো মোন্তেরোসো ও এলেনা পোনিয়াতো্উস্কা। কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন তাঁর বন্ধুত্বের পরিধিতে। সকলেই জানেন যে বহুবার তাঁর কাছে এসেছেন কার্লোস সালিনাস দে গোতারি।

No comments

Theme images by lobaaaato. Powered by Blogger.