Header Ads

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এবং মেহিকোর সঙ্গে তার সংযোগ (শেষ পর্ব)

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এবং মেহিকোর সঙ্গে তার সংযোগ (শেষ পর্ব)



দ্বিতীয় নির্বাসন

একশো বছরের নিঃসঙ্গতার সাফল্যের পর গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস মেহিকো আর কলোম্বিয়া দুদেশেই থাকতেন। কিন্তু ১৯৮১ সালে এল তিয়েম্পোকাগজের এক সাংবাদিক, যাঁর ছদ্মনাম ছিল আইয়াতোলা”, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন যে এম-১৯ গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে এবং দক্ষিণ কলোম্বিয়ায় এক গেরিলা সেনাবাহিনীর উত্থানে তিনি মদত দিয়েছেন।

তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হুলিও সেসার তুরবাই আইয়ালার আমলে তাঁকে কারারুদ্ধ করার জন্য এই অভিযোগ যথেষ্ট ছিল। কলেরার সময়ে প্রেম উপন্যাসের স্রষ্টা এরপর থেকে মেহিকোতেই আমৃত্যু তাঁর নিবাস গড়ে তোলেন।

মেহিকোপর্ব

মেহিকোর মাটিতে গার্সিয়া মার্কেসের অভিজ্ঞতা এবং তাঁর রচনায় সেই অর্জনের প্রতিফলনের সামগ্রিক বিবরণ দেওয়া অসাধ্য সাধন। তবুও মেহিকো শহরে থাকাকালীন তাঁর জীবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলা যেতে পারে:

•           মেহিকোর সঙ্গে গাবোর প্রথম প্রকৃত সংযোগ তৈরি হয় যখন আলবারো মুতিস তাঁকে হুয়ান রুলফোর পেদ্রো পারামো পড়তে বলেছিলেন।

•           গার্সিয়া মার্কেস নিজেই উল্লেখ করেছেন যে ১৯৬১ সালের ২রা জুলাই প্রথমবার তিনি মেহিকো শহরে পা রাখেন আর সেদিনই আর্নেস্ট হেমিংওয়ে আত্মহত্যা করেন।

•           “পালাসিয়ো দে বেইয়াস আর্তেস”-এর হলে আন্দেসের ওডিসিডকুমেন্টারি ছবি দেখার সময় মারিও বার্গাস ইয়োসা গাবোকে একটা ঘুষি মারেন। সর্বজনবিদিত এই ঘটনার কারণ কেউ জানে না কিন্তু এর পরেই লাতিন আমেরিকার দুই নোবেলজয়ীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সমাপ্তি ঘটে।

•           মেহিকো শহরে তাঁর বাসায় বসে তিনি একটি টেলিফোন পান এবং তাঁকে বলা হয় যে তিনি নোবেল পুরষ্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছেন।

যদিও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের জগতে তিনি আর বেশি বেরোতেন না, তবে জন্মদিনে সাধারণত বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতেন।

মেহিকোর এই বাড়িতেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে ২০১৪ সালের ১৯শে এপ্রিল। পালাসিয়ো দে বেইয়াস আর্তেস”-এ আয়োজিত স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন এনরিকে পেইনঞা নিয়েতো এবং হুয়ান মানুয়েল সান্তোস, যথাক্রমে মেহিকো ও কলোম্বিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান।

তাঁর চিতাভস্ম নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর জন্মস্থান কার্তাহেনায়, কিন্তু মেহিকোর রাজধানীর মর্মে মর্মে তাঁর যাপনের যে নির্যাস আজও অনুভূত হয় তা চির অম্লান থেকে যাবে।



অনুবাদকের টীকা:

১। প্রেন্সা লাতিনা: পুরো নাম আহেন্সিয়া দে নোতিশিয়াস লাতিনোআমেরিকানা” (Latin American News Agency) কুবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম, কুবার বিপ্লবের কিছুদিন পরে, ১৯৫৯ সালের মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠিত।

২। মতান্তরে, গার্সিয়া মার্কেস আকাপুলকো পৌঁছাননি, মাঝপথ থেকেই তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এই মতানৈক্যের অন্যতম প্রধান কারণ তিনি নিজে বিভিন্ন স্মৃতির মধ্যে গোলমাল করে ফেলতেন এবং সর্বোপরি, সাংবাদিকদের সঙ্গে মজা করতে তিনি খুব ভালোবাসতেন।

৩। একশো বছরের নিঃসঙ্গতা উপন্যাসের প্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়েও মতদ্বৈধতা আছে।

৪। এই ঘটনার ব্যাখ্যায় মেহিকোর কবি ও প্রাবন্ধিক হোসে এমিলিও পাচেকো বলেছেন: 

ইঙ্গ-মার্কিন উপন্যাসের জমানার অবসান ও ইস্পানোআমেরিকার কথাসাহিত্যের জয়যাত্রার সূচনা

No comments

Theme images by lobaaaato. Powered by Blogger.